পথ ----- ১৬
-----------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
চোখ যখন থেকে সুন্দরকে দেখতে শিখেছে তখন থেকেই নারীর প্রতি একটা আলাদা
টান তৈরি হয়ে গেছে। অনেককেই তখন ভালো লাগত। আমার থেকে ছোট, আমার বয়সী এবং আমার
থেকে বড়। সকলের প্রেমেই আমি পড়েছি। বয়সের কথা আমি কখনও ভাবিনি, আজও ভাবি না।
আমার তাকে ভালো লাগছে কিনা এটাই শেষ কথা। প্রথম প্রেমে পড়ি ক্লাস নাইনে। তার
আগে অনেককেই ভালো লেগেছে। কিন্তু প্রেম বলতে এটাই প্রথম।
মেয়েটি পড়ত ক্লাস এইটে। নাম কেয়া। আমাদের বাড়ি থেকে কিছুটা গিয়েই তার
বাড়ি। একেবারে রাস্তার ধারেই। মেয়েটির আর আমার যাতায়াতের পথ ছিল একটাই। এক
পথ দিয়েই আমরা স্কুলে পড়তে যেতাম। আমার তো আর তখন আজকের ছেলেমেয়েদের মতো
ঘন্টায় ঘন্টায় পড়তে যাওয়া থাকত না। পড়া না থাকলেই বা, ও পড়তে গেলে আমি
পথে ওর জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। পড়ে ফেরার সময়ও একইভাবে অপেক্ষা। স্কুলে
যাওয়ার সময়ও একই নিয়ম পালন করতাম।
পড়তে বা স্কুলে যাওয়ার সময় মেয়েটির পাশে পাশে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে
যেতাম না। গল্প করা তো অনেক দূরের কল্পনা। শুনলে অনেকেই হাসবে মেয়েটির সঙ্গে
এসব কিছুই করতাম না। তাহলে অপেক্ষা কিসের জন্য? পথের ওপর কোনো একটা জায়গায়
দাঁড়িয়ে থাকতাম। যাতে সেখান থেকে মেয়েটিকে খুব ভালো করে দেখা যায়। অথবা
এমনও হয়েছে আমি কোনো দোকানের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছি। ও আমার সামনে দিয়ে হেঁটে
গেল। আমি দুচোখ ভরে দেখলাম। শুধুই কি একতরফা। না, মোটেই না। আমি চাইতাম সেও
দেখুক এবং সে দেখতও।
ধনিয়াখালি মহামায়া বিদ্যামন্দিরের স্কুল ম্যাগাজিনে "কেয়া" নামে একটি
কবিতাও লিখেছিলাম। শিক্ষকদের মধ্যে অনেক হৈ চৈ হয়েছিল। কারণ আমার হাত ধরেই
স্কুল ম্যাগাজিনে প্রথম প্রেমের কবিতা প্রকাশ পায়। শিক্ষকরা এটা কেউ ভালো
চোখে দেখেন নি। এটা সম্ভব হয়েছিল শিক্ষক প্রশান্ত কুমার দাসের জন্য। উনি আমাকে
খুব ভালোবাসতেন। আমাদের দুজনের জন্যই স্কুল ম্যাগাজিন সাবালক হয়।
তখন সাহস বলতে একেবারেই ছিল না। শুধু কি সাহসের অভাবের জন্যই দূর থেকে
প্রেম করতাম? মোটেই না। আসলে তখন প্রেম করে মেয়েটির সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেব
------ এই ভাবনা কখনও মাথায় ছিল না। একটা মেয়েকে আমার ভালো লাগছে। তাকে দেখে
মনে মনে শান্তি পাচ্ছি ------ এটা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার ছিল। পথের ওপর
আমি একজন নারীর জন্য অপেক্ষা করছি ------ এটা আমাকে মনে মনে ভালো রাখে।
এইসময়কালীন অবস্থায় আমার চারপাশে একটা স্বস্তিকর আবহাওয়া বিরাজ করে। যার
জন্যই সর্বক্ষণ ভালোবাসার পরিবেশেই আমার দিনযাপন।
হরিৎ :07/06/2017
********************
Related