আমপানের বর্ষপূর্তিতে ‘ইয়াস’-এর আছড়ে পড়ার আশঙ্কা। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মিলে গিয়ে শনিবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার ২৩ মে সকালে সেটি আরও শক্তি সঞ্চয় করবে। সোমবার বেশি শক্তি সঞ্চয় করে সেই নিম্নচাপ উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পরিণত হবে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি আরও উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকবে ও আরও তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরপর ২৬ মে বুধবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়বে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ কোথা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা না তৈরি হলেও ঝড়টির পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনাই সব থেকে বেশি। বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা ওয়েদার আল্টিমা জানাচ্ছে, ‘ইয়াস’-এর সাগরদ্বীপ এবং দিঘার মধ্যে দিয়ে কোনো একটি অঞ্চল দিয়ে উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। তবে আরও একটি ধারণা হচ্ছে ‘ইয়াস’ দিঘা এবং বালেশ্বরের মধ্যে দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে ‘ইয়াস’ কতটা শক্তিশালী হবে। গত বছরের আমপানের স্মৃতি এখনও টাটকা। ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটারের সর্বোচ্চ গতিবেগ নিয়ে সেই ঝড় আছড়ে পড়েছিল সাগরদ্বীপে। তার পর কলকাতা যখন অতিক্রম করে, তখন তার গতিবেগ ছিল ১৩৩ কিলোমিটার। তবে শহরের দক্ষিণাংশে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৫০ কিলোমিটারের আশেপাশে ছিল।
তবে মনে করা হচ্ছে, আমপানের মতো অতটা শক্তি ধারণ করবে না ‘ইয়াস।’ এটি উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে। এর প্রধান কারণ হল ‘আমপান’ বঙ্গোপসাগরের ওপরে ছয় দিন ছিল, ফলে ক্রমশ বাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ‘ইয়াস’ তিন দিনের বেশি থাকতে পারবে না। ফলে এর শক্তি বেশি বাড়ানোর ক্ষমতা কম।
‘ইয়াস’-এর আছড়ে পড়ার সময় গতিবেগ সর্বোচ্চ ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটারের কাছাকাছি থাকতে পারে। যদি সাগরদ্বীপের কাছে ‘ইয়াস’ উপকূল অতিক্রম করে, তা হলে কলকাতায় হাওয়ার গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। আর যদি দিঘা দিয়ে উপকূল পেরোয়, তা হলে কলকাতা ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগের ঝোড়ো হাওয়া পেতে পারে।
তবে ঝড়ের দাপট যেমনই থাক না কেন, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ যে প্রবল বৃষ্টিতে ভাসতে চলেছে তা কার্যত নিশ্চিত। ২৪ তারিখ সোমবার সন্ধ্যা থেকে দক্ষিণবঙ্গের আকাশে মেঘ ঢুকতে শুরু করবে। ২৫ তারিখ থেকে শুরু হয়ে যাবে বৃষ্টি। ওই দিন বিকেল থেকে পরবর্তী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায়। কলকাতা এবং উপকূলবর্তী অঞ্চলের জেলাগুলিতে চরম অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
শুধু দক্ষিণবঙ্গই নয়, ‘ইয়াস’ কিন্তু উত্তরবঙ্গ, সিকিম এবং ঝাড়খণ্ডেও প্রবল বৃষ্টি দিতে চলেছে। বুধবার এবং বৃহস্পতিবার এই তিন অঞ্চলেই ব্যাপক বৃষ্টি হতে পারে। সিকিম এবং উত্তরবঙ্গে ধস নামা এবং নদীতে জলস্ফীতি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।