আপাতত ধ্বংসের অভিমুখে বাংলা। সাগরে বাঁক নিয়ে সে যেতেই পারে ওড়িশা বা বাংলাদেশে। কিন্তু যদি সে বাঁক না নেয় তাহলে সোজা সে ধাক্কা মারবে এই বাংলার বুকেই। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সামুদ্রিক ঘূর্ণীঝড় যশকে নিয়ে এবার এমনই সতর্কবার্তা শোনালেন আবহাওয়াবিদরা। আর তাই মনে করা হচ্ছে ঝড়ের জেরে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে চলেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। আগামী বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যেই এই জেলার খেজুরি থেকে কাঁথির মধ্যেই যশ ভূমিস্পর্শ করতে পারে বলেই তাঁরা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মনে করা হচ্ছে দক্ষিনবঙ্গের বিস্তীর্ন এলাকায় এই ঝড় কার্যত তান্ডব চালাবে। আর তাই রাজ্যবাসীকে এই ঝড় নিয়ে সতর্ক করে বিশেষ বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যশের জন্ম গতকালই হয়েছে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে। গতকাল সারাদিনই সে নিম্নচাপ হিসাবেই অবস্থান করেছে। এদিন সে গভীর নিম্নচাপের চেহারা নেবে। আগামীকাল তা রূপান্তরিত হবে ঘূর্ণীঝড়ে। আর তারপর থেকেই দ্রুত শক্তি বাড়িয়ে সে এগোতে থাকবে স্থলভূমির দিকে। বুধবার সকালেই সে হাজির হবে ওড়িশা, বাংলা ও বাংলাদেশের মুখে। এরপর দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যেই সে ভূমিস্পর্শ করবে। দিল্লির মৌসম ভবন এখনও পর্যন্ত যশের সম্ভাব্য ল্যান্ডফল বা ভূমিস্পর্শ স্থান চিহ্নিত করেনি। আগামিকাল যশ ঘূর্ণীঝড়ে রূপান্তরিত হলে তারপর তার গতিপথ ও সম্ভাব্য ল্যান্ডফলের জায়গা চিহ্নিত করবে মৌসম ভবন। তবে ঝড়ের অভিমুখে যে এখনও পর্যন্ত বাংলাই রয়েছে সে বিষয়ে তাঁরা সতর্ক করে দিয়েছেন। দেখার বিষয় সাগরে থাকাকালীন সময়ে যশ কোনও বাঁক নেয় কিনা। যদি তা বাঁক নেয় তাহলে হয় ওড়িশা নাহলে সে বাংলাদেশেই ল্যান্ডফল করবে। তবে সেক্ষেত্রেও বাংলার বিপদ কমে যাচ্ছে না। ওড়িশায় ল্যান্ডফল হলে দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকছে। আর যদি বাংলাদেশে ল্যান্ডফল হয় তাহলে দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি ও নদিয়া জেলা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আর যদি সে সরাসরি পূর্ব মেদিনীপুরেই ভূমি স্পর্শ করে তাহলে দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া ও হুগলি জেলা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, যশের প্রভাবে আগামিকাল থেকেই আবহাওয়া বদলে যেতে শুরু করবে এই রাজ্যে। আগামিকাল সন্ধ্যা থেকেই ওড়িশা, বাংলা ও বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে দেবে। ঘন্টায় ৪০ থেকে ৫০কিমি বেগে বইবে সে হাওয়া। হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘন্টায় ৬০কিমি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ওড়িশা, বাংলা ও বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। এরপর বেলা যত গড়াবে বৃষ্টির তেজ ও পরিমাণ যেমন বাড়বে তেমনি মূল স্থলভূমির ভিতরের জেলাগুলিতেও বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। বুধবার সকাল থেকেই হাওয়ার বেগ আরও বাড়বে এই সব এলাকায়। সঙ্গে গাঙ্গেয় বঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। এরপর বেলা যত গড়াবে হাওয়া ও বৃষ্টির বেগ তত বাড়বে। উপকূলবর্তী এলাকায় বুধবার সকাল থেকেই ঘন্টায় প্রায় ১০০কিমি বেগে ঝড়ো হাওয়া বইবে, সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। আর দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে যখন যশ ভূমিস্পর্শ করবে তখন তার গতিবেগ জনে ঘন্টায় ১৪০ থেকে ১৮০কিমি। যা কার্যত সুপার সাইক্লোনের ঠিক পূর্ববর্তী ধাপ। আর তাই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তীব্র জলোচ্ছ্বাসে ভাসতে পারে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিন ২৪ পরগনা। এই দুই জেলার বিস্তীর্ন এলাকা কয়েক ফুট জলের নীচে কার্যত তলিয়ে যেতে পারে।
এই অবস্থায় রাজ্যবাসীকে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, নবান্নের পাশে প্রশাসনিক ভবন উপান্নতে তৈরি হচ্ছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম। সেখানে বসেই তিনি মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত ঝড়ের গতিবিধি নজর রাখবেন। প্রতিটি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে এই কন্ট্রোল রুম। যেখন যেমন অবস্থা হবে তখনই সেই রকম পদক্ষেপ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনকেই সেই রকম নির্দেশ দেবেন। তিনি জানিয়েছেন রাজ্যের প্রতিটি জেলায় এনডিআরএফ টিম পৌঁছে গিয়েছে। যশের মোকাবিলায় রাজ্যে বেশ কয়েকটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে যেখানে আমজনতা আপৎকালীন অবস্থায় ফোন করে সাহায্য চাইতে পারেন। এর নম্বর ১০৭০ এবং ০৩৩-২২১৪৩৫২৬।