কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে ডাকা হয়েছিল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও। আর তা নিয়েই আপত্তি তুলেছিলেন মমতা। মূলত বৈঠকে শুভেন্দুর উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি থাকাতেই মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে যোগ দেননি। কলাইকুণ্ডায় গেলেও খুবই সংক্ষিপ্ত বৈঠক সেরে তিনি বেড়িয়ে আসেন। পরে এই নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু হতেই বিশেষ করে বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে আক্রমণ শুরু করায় এদিন দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে মমতাও পাল্টা সরব হলেন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। কার্যত মোদির ভন্ডামির মুখোশ খুলে দিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক কালের ঘূর্ণিঝড় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গুজরাত ও ওড়িশা সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অথচ সেই দুই বৈঠকের কোনওটিতেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতাদের ডাকা হয়নি। কেন্দ্রেও বিরোধীদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না, তাঁদের কথা শোনা হয় না। অথচ এখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হবে বলে প্রচার করে বৈঠক হচ্ছে দলের নেতা, রাজ্যপাল, কেন্দ্রের মন্ত্রী আর বিরোধী দলনেতার সঙ্গে যেন সরকারটা তাঁরাই চালাচ্ছেন বাংলায়। অথচ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীই বাদ। এই যুক্তি তুলে ধরেই এদিন মমতা আক্রমণ শানিয়েছেন মোদি তথা বিজেপিকে।
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে প্রচন্ড ক্ষোভের সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে খবর খাওয়ানো হয়। তারপর মন্ত্রীদের দিয়ে বলানো হয়। আমরা সাইক্লোনের জন্য কাজ করছি, তখন আমাকে বদনামের ছক সাজানো হচ্ছে। আসল কী ঘটনা ঘটেছিল, সেটা জানাতে সাংবাদিক বৈঠক করছি। আদতে প্রতিহিংসার রাজনীতি হল। আমি সফরসূচি ঘোষণার পরের দিন জানতে পারি, প্রধানমন্ত্রী কলাইকুণ্ডায় আসতে চলেছেন। আমরা সফরসূচি কাঁটছাট করেছি। আমাকে সাগরে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে বলেছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর। প্রধানমন্ত্রীর চপার নামার পর অনুমতি দেওয়া হবে। আমরা ২০ মিনিট অপেক্ষা করছি। আমি সেখানে পৌঁছলে দেখতে পাই প্রধানমন্ত্রী পৌঁছে গিয়েছেন। আমরা পৌঁছলে সেখানে অপেক্ষা করতে বলা হল। ১০-১৫ মিনিট পর বললাম প্লিজ ১ মিনিটের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। এসপিজি-কে বিবেক সহায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী অপেক্ষা করছেন। এসপিজি বলে, ১ ঘণ্টা থাকতে বলুন। তার পর জানতে পারলাম, কনফারেন্স রুমে গেলাম। ওখানে থাকার কোনও দরকার ছিল না। আগে জানতাম মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক। গিয়ে দেখলাম রাজ্যপাল, বিধায়ক, বিরোধী দলনেতা ও কেন্দ্রীয়মন্ত্রীরা রয়েছেন। বিজেপি নেতাদের মাঝে আমি একা। সৌজন্য রাখতে দেখা করি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।’
এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঘরে ঢুকে প্রধানমন্ত্রীকে বলি, আমাদের দিঘা যেতে হবে। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় পরিদর্শন করে এসেছি। আবহাওয়ার জন্য সেখান থেকে কলাইকুণ্ডায় আসা কঠিন ছিল। আমরা রিপোর্ট দিতে চাই। আমি রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে দিই। তার পর বলি, আপনার অনুমতি নিয়ে আমি দিঘায় যাচ্ছি। তাহলে আমাদের দোষ কোথায়? কেন আমরা বৈঠকে থাকিনি? আগে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল। গিয়ে দেখলাম রাজ্যপাল, বিধায়ক, বিরোধী দলনেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করছেন। ফাঁকা চেয়ারের ছবি তুলে দেখিয়েছি। আমাদের ক্যামেরাম্যান তো ঢুকতে দেয় না। কতক্ষণ কথা বলেছি, সেই ফটোটা কোথায়? আপনাদের লিঙ্ক দেয়, আর ফটোশপ তৈরি করে। তাঁরা আমাকে পছন্দ করে না কেন আমি জানি না। আমাদের অপমান করলেও সামলে নেব। আমরা সংবিধান মেনে চলি। রাজ্যের সংবিধানও মানতে হবে। আমরা কিছু চাই না। রিপোর্ট দিয়েছি। বুলবুলে দেয়নি, ফণীতে দেয়নি, আম্ফানে অগ্রিম দিয়েছে। ওটা আমাদেরই টাকা। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, যা আপনি ভালো বোঝেন। আমি কিছু চাইনি। তিনবার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে চলে এসেছি। ইচ্ছাকৃতভাবে খালি আসন রাখা হল। আমি রাজনীতির লোকদের দেখলাম। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে থাকতে পারেন না। গুজরাটে কেন বিরোধী দলনেতাকে ডাকলেন না। ওড়িশায় বিরোধী নেতাকে ডাকা হয়নি। আমার রাজ্যে এসে আপনি সংঘাতের আবহ তৈরি করেন।