মমতা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। পরিবহণ ও সেচ দফতরের দায়িত্ব ছাড়লেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।চিঠিতে এতদিন রাজ্যবাসীর সেবা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তবে, বিধায়ক পদ ছাড়ছেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।গতকাল হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্সের ( HRBC) চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তার ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই এদিন সরকারি সব নিরাপত্তা ছাড়েন শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার সকালে এই খবরেই নন্দীগ্রামের বিধায়কের মন্ত্রিত্ব এবং দলত্যাগের জল্পনা আরও তীব্র হয়েছিল। এতদিন, ‘জেড’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেতেন শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের অন্যতম মুখ শুভেন্দু অধিকারী। বাম আমল থেকেই নিরাপত্তা পেতেন তিনি। তবে নন্দীগ্রামের গণআন্দোলনের গণনেতা ঠিক কোন দলে যোগদান করতে চলেছেন বা নতুন কোনও দল তৈরি করবেন কিনা তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। ফলে কিছুটা হলেও দোলাচলে রয়েছেন তাঁর অনুগামীরা।
Today at 1:05 pm a resignation letter of Mr. Suvendu Adhikari from office as minister addressed to Hon’ble Chief Minister has been forwarded to me.
The issue will be addressed from constitutional perspective. pic.twitter.com/cxjF68uomH— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) November 27, 2020
গত বুধবার বাঁকুড়ার শুনুকপাহাড়ির দলীয় সভামঞ্চ থেকেই তৃণমূলসুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করেই বেশ ইঙ্গিতবাহী বার্তা দল, দলের নেতাকর্মী এবং দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের দিয়েছিলেন। সেইদিনই তিনি জানিয়ে দেন, গোটা রাজ্যে সব বিধানসভা কেন্দ্রে, সব লোকসভাকেন্দ্রে, সব জেলায়, সব ব্লকে, সব গ্রামে এমনকি সব শহরেও তিনিই দলের একমাত্র পর্যবেক্ষক। সেই মন্তব্য থেকেই এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল তৃণমূলে এখনই আর পর্যবেক্ষক পদ ফিরে আসছে না। তাই শুভেন্দু অধিকারীও আর পর্যবেক্ষকের পদ ফিরে পাবেন না। কার্যত রাজ্যের অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশারদদের দাবি ছিল বিসর্জনের বাজনা সেদিনই বেজে গিয়েছিল। দলনেত্রীর ঘোষণা যে শুভেন্দু অধিকারী আর মুখ বুজে মেনে নেবেন না সেটা সেদিনই বোঝা গিয়েছিল। দুই তরফের বিচ্ছেদ কার্যত সময়ের অপেক্ষা হয়ে দাঁড়ায় সেই মুহুর্ত থেকেই।গতকালই শুভেন্দু নিজে থেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন এইচআরবিসি’র চেয়ারম্যানের পদ থেকে। রাতারাতি সেই পদ চলে সাংসদ তথা আইনজীবি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। তখন থেকেই জল্পনা ছড়িয়েছিল যে কোনও মুহুর্তে তিনি রাজ্যের মন্ত্রীসভা থেকেও ইস্তফা দিতে পারেন। শুক্রবার সেটাই হল বেলার দিকে। ফ্যাক্স করে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিলেন নিজের ইস্তফাপত্র। একই সঙ্গে এদিনই তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদও। তৃণমূল শিবিরে শোনা যাচ্ছে শুভেন্দুর হাতে থাকা দফতর যেতে পারে সৌমেন মহাপাত্রের কাছে। একই সঙ্গে শোনা যাচ্ছে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারেন দিব্যেন্দু অধিকারীও। তবে এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে সরকারি স্তরে কিছু ঘোষণা করা হয়নি। তবে শুভেন্দুর অনুগামীদের মধ্যে এখন বেশ স্পষ্ট বিভাজন দেখা দিয়েছে। একটি পক্ষ তাঁর সমর্থনেই থাকছে এবং তিনি যদি বিজেপিতেও যোগদান করেন সেই ক্ষেত্রেও তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু অপর পক্ষ তাতে নারাজ। তাঁরা চান রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির হাত শক্ত না করতে। এরা তৃণমূলেই থেকে যেতে চান। তাই এটা পরিষ্কার শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়লেও তাঁর সব অনুগামী তাঁর সঙ্গে বিজেপির পথে পা বাড়াবেন না। এদিকে শুভেন্দুর ঘনিষ্ট মহল সূত্রে জানা গিয়েছে এদিন কলকাতায় এসে একটি সাংবাদিক বৈঠক করতে পারেন এই জননেতা। সেখানেই তাঁর অবস্থান সম্পর্কে সব কিছু স্পষ্ট করে দিতে পারেন।