” ট্যাংরা তবুও কাটন যায়
আরে শিঙ্গি মাছে গুতা দেয়
শিঙ্গি মাছে মারে কাটারে
পরান তো যায় রে জলিয়া ”
আজও এই গানটি বাঙালীর মনে আবেগের ঢেউ তুলে । রাহুল দেববর্মণ হচ্ছেন ভারতের একজন প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক এবং সুরকার। তিনি পঞ্চম বা পঞ্চমদা হিসেবেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি ভারতের আরেক খ্যাতিমান গায়ক এবং সুরকার শচীন দেব বর্মণ এবং মীরা দেব বর্মণের পুত্র ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন ভারতের প্রখ্যাত গায়িকা আশা ভোঁসলেজির স্বামী। পঞ্চমদা যেমন বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তেমনি খাদ্য রসিকও ছিলেন । মা সরস্বতীর অশেষ কৃপা ছিল ওনার উপর। বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী মহম্মদ রফি মাঝে মধ্যে পঞ্চমদার জন্য মোঘলাই খবার রান্না করতেন । আমাদের প্রিয় পঞ্চমদার জন্ম তিথি উপলক্ষে ওনার পছন্দের কয়েকটি রেসিপি আপনাদের জন্য ।
চিংড়ির চপ
উপকরণ
- ২ কাপ বড় খোসা ছাড়ানো চিংড়ি
- ১ চা চামচ আদা বাটা
- ১ চা চামচ শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো
- ১ চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো
- ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজকুচি
- ১ চা চামচ রসুন কুচি
- ১ চা চামচ চেরা কাঁচা লংকাকুচি
- ১ চা চামচ পুদিনা পাতা কুচি
- ১ টি ডিম
- ব্রেড ক্র্যাম্বস
- ১ টেবিল চামচ ময়দা
- নুন স্বাদমতো
- সাদা তেল
প্রণালী
চিংড়ি খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে কিমার মতো করে করে কুচি করে কাটুন।
এরপর এতে সব মশলা পেঁয়াজ , রসুন, কাঁচালঙ্কা ও পুদিনাপাতা কুচি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
মিশ্রণটি আঠালো করার জন্য ময়দা দিন।
একটি ডিম ফ্যাটিয়ে আলাদা করে রাখুন।
একটি প্যানে ডুবোতেলে ভাজার জন্য তেল দিয়ে তেল গরম হতে দিন।
চিংড়ির মিশ্রণটি পছন্দ মত আকারে গড়ে নিয়ে প্রথমে ডিমের মিশ্রণে ডুবিয়ে ব্রেড ক্র্যাম্বসের গুঁড়োর মধ্যে কোট করে তেলে দিয়ে দিন ।
আপনি চাইলে বল আকারেও করতে পারেন।
লাল করে ভেজে তুলে নিন ।
তৈরি মজাদার কুড়মুড়ে চিংড়ি চপ ।
টমেটো কেচাপের সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন ।
নারকেল পোলও
উপকরণ
- গোবিন্দ ভোগ চাল ২ কাপ
- নারকেল কোড়া
- চারা কাঁচা লঙ্কা
- গোটা গরম মশলা
- ঘি
- জল ঝরা টক দৈ
- তেজ পাতা
- নুন
- চিনি
প্রণালী
গোবিন্দ ভোগ চাল ভাল করে ধুয়ে নিন ।
ভালকরে ফুটিয়ে ঝরঝরে ভাত রান্না করে নিন ।
কড়াইতে ঘি দিয়ে একে একে এলাচ , দারচিনি , লবঙ্গ ও তেজ পাতা ফোড়ন দিন।
নারকেল কোড়া ভাল করে ভেজে নিন ।
রান্না করা ভাত দিয়ে দিন।
দৈ , নুন ও চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন ।
গ্যাসের আঁচ কমিয়ে রান্না করবেন ।
সবশেষে ১ চামচ ঘি , চেরা কাঁচা লঙ্কা , কাজু ও কিসমিস দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ঢেকে দমে রান্না করুন ।
৫ / ১০ মিনিট পর ঢাকনা উঠিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ।
গোয়ান ফিস কারি
উপকরণ
- সামুদ্রিক মাছ স্যামন, পমফ্রেট হলে ভালো
- তেঁতুলের পাল্প
- পেঁয়াজ
- টমেটো
- শুকনো লঙ্কা৭-৮টা
- রসুন
- আদা
- নারকেল কোরা দেড় কাপ
- ধনে গুঁড়ো
- জিরে গুঁড়ো
- হলুদ গুঁড়ো
- কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো
- চেরাকাঁচালঙ্কা
- তেল
- নুন
প্রণালী
আমি পমফ্রেট মাছ দিয়ে বানাব ।
তেঁতুলের পাল্প, পেঁয়াজ, টমেটো, নারকেল কোরা, আদা, রসুন, শুকনো লঙ্কা মিক্সিতে দিয়ে একসঙ্গে পেস্ট করে নিন।
কড়াইতে তেল গরম করে বাটা মশলা ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে ৫ মিনিট কষিয়ে নিন।
২ চামচ জিরে ও ধনে গুঁড়ো দিয়ে দিন ।
২ কাপ গরম জল দিয়ে নুন দিয়ে দিন ।
ঝোল ফুটে গেলে মাছের টুকরো , কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো ও চেরা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে গ্যাসের আঁচ বাড়িয়ে আরও ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন।
তৈরি আপনার গোয়ান ফিস কারি ।
চিংড়ি রোষ্ট
উপকরণ
- বাগদা চিংড়ি ৫০০ গ্রাম
- পেঁয়াজ বাটা
- আদা ও রসুন বাটা
- গোলমরিচ গুড়ো
- হলুদ
- সর্ষে বাটা
- কাঁচা লঙ্কা বাটা
- নুন
- চিনি
- সর্ষের তেল
প্রণালী
চিংড়ি মাছ ধুয়ে খোসা ছড়িয়ে রেখে দিন ।
একটি বাটিতে পেঁয়াজ বাটা , সর্ষে বাটা, গোলমরিচ গুঁড়ো , কাঁচা লঙ্কা বাটা , শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো ,নুন , ২ চামচ সর্ষের তেল , আদা ও রসুন বাটা এক সঙ্গে মিধিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন ।
কড়াইতে ২ / ৩ চামচ তেল দিয়ে ১ চিমটি চিনি দিন ।
এইবার এক এক করে চিংড়ি মাছ গুলি দিয়ে দিন ।
বাটিতে রাখা বাকি মশলা গুলি মাছের উপর দিয়ে ঢেকে দিন ।
৫/ ১০ মিনিট পর মাছগুলি উল্টে দিন ।
চিংড়ি মাছগুলি সেদ্ধ হয়ে গেলে এক চামচ ঘি দিয়ে নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন ।
তৈরি চিংড়ির রোষ্ট ।
মোরগ মোসাল্লাম
উপকরণ
- মোরগ একটা (আস্ত, বুক কেটে নিলে ভাল করে পরিস্কার করা যায়)
- জয়ফল
- জয়ত্রী, ১ চা চামচ
- জাফরান এক চা চামচ কোওড়া জলের সাথে ভিজিয়ে রাখুন
- চিনা বাদাম বাটা ৪ চা চামচ (বাটা বা গ্রাইন্ড করা)
- দারচিনি
- এলাচি
- কিসমিস ১০/১২
- তেজপাতা, তিনটি
- আদা ২ টেবিল চামচ
- রসুন দেড় টেবিল চামচ
- ধনিয়া ১ চা চামচ
- জিরে ১ চা চামচ
- কাঁচা লঙ্কা বাটা
- টমেটো সস ২ টেবিল চামচ
- টক দই এক কাপ
- চিনি ১ চা চামচ
- নুন
- তেল এক কাপ
- বেরেস্তা, এক কাপ (ভাঁজার পর)
- মোরগ বাঁধার জন্য কয়েক ফুট সাদা সেলাই সুতো
প্রনালীঃ
অনেকে আস্ত মুরগী রান্না করতে বুকটা কেটে নেন না, এতে পরবর্তিতে সুতোর ব্যবহারের দরকার হয় না বটে তবে ভিতরটা ভাল করে পরিস্কার করতে এভাবেই ভাল।
আগে থেকেই মশলা সাজিয়ে রাখলে রান্না করতে সময় কম সময় লাগে।
একে একে সব মশলা দিয়ে দিন।
জাফরান , টমেটো সস ও টক দৈ দিতে ভুলবেন না।
এবার ভাল করে মেখে আধা ঘন্টার জন্য রেখে দিন।
রান্না শুরু করার আগে মোরগটাকে সুতো দিয়ে বেঁধে নিন, এতে মোরগের আকার ঠিক থাকবে।
এবার হাড়িতে হাফ কাপ তেল গরম করে বেরেস্তা পুরো মোরগটা এবং মশলা গুলো দিয়ে দিন ।
ঢাকনা দিয়ে মিডিয়াম আঁচে মিনিট ২০ এর জন্য রেখে দিন।
তবে মাঝে মাঝে দেখে নেড়ে দিন ।
মাংস নরম হল কিনা দেখে নেবেন বেশী সময় লাগবে না।
দেশী মোরগ হলে আরো কিছু বেশী সময় লাগতে পারে ।
এবার বেরেস্তা গুঁড়ো ছড়িয়ে দিন এবং নামানোর আগে কয়েকটা চেরা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে দিন ।
তৈরি আপনার মুরগ মোসাল্লাম ।
টমেটো ও খেজুরের চাটনি
উপকরণ
- ৭-৮ টি টমেটো কুচি
- ১০টা খেজুর
- ১২টা কাজু বাদাম
- বেশ কিছু কিসমিস
- আমসত্ব
- ২টি শুকনো লঙ্কা
- সাদা তেল
- চিনি
- কালো সর্ষে
- ভাজা মশলা ( শুকনো খোলায় মৌরী , এক চিমটি মেথি , একটি শুকনো লঙ্কা ভেজে গুঁড়ো করে নিন )
প্রণালী
ছোট ফ্রাইং প্যান নিয়ে তেল দিয়ে দিন।
তেল গরম হলে শুকনো লঙ্কা ও কালো সর্ষে ফোড়ন দিন ।
এর মধ্যে কাটা টমেটো আর খেজুর, আমসত্ব দিয়ে মিডিয়াম আঁচে রান্না করতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত টমেটো থেকে সব জল বেরিয়ে আসছে।
সমস্ত উপকরণ ভালভাবে মিশে গেলে কাজু কিসমিস ও ভাজা মশলা ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
ঠাণ্ডা হলে পরিবেশন করুন ।
কমলা ভোগ
উপকরণ
- রসগোল্লার জন্য ছানা ১ কাপ
- অরেঞ্জ ফুড কালার আধা চা চামচ
- কমলার রস আধা কাপ
- চিনি ১ কাপ
প্রণালী
রসগোল্লার ছানা তৈরির জন্য ১ লিটার দুধ নিন।
দুধ ফুটে উঠলেএর মাধ্যে ৩/৪ টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে দিন।
গ্যাস বন্ধ করে ঢেকে রাখুন।
১০ মিনিট পর পাতলা কাপড় দিয়ে ছানা ছেঁকে নিন ।
ভালো করে ধুয়ে চিপে নিন ও ঝুলিয়ে রাখুন মিনিট পাঁচেক।
জল ঝরে গেলেই ছানা তৈরি।
গরম থাকতেই মিষ্টি তৈরি করবেন।
ছানায় ফুড কালার মিশিয়ে খুব ভালো করে মখে নিন যেন ছানা তেলতেলে হয়ে যায়।
চিনির রস বানিয়ে নিন।
চিনির রস যেন বেশি ঘন না হয়ে যায়।
পাতলা রস হবে।
ছানার বল বানিয়ে নিন এবং চিনির রসে দিয়ে অল্প আঁচে ২০-২৫ মিনিট রাখুন।
এবার গ্যাস বন্ধ করে কমলার রস মিষ্টির হাঁড়িতে ঢেলে দিয়ে মিষ্টি সহ ২ ঘন্টা ঢেকে রেখে দিন।
পরিবেশন করার জন্য কমলা ভোগ তৈরি ।