রোদ্দুর দিনের গাছকথারা
~~~~~~~
সোমাদ্রি সাহা
জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) ১৯৯২ সাল থেকে জীববৈচিত্র্য দিবস পালন করছে। আজ ২২ মে, বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস। বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবসের ধারণাটির সূচনা হয় ১৯৯২ সালে। রাষ্ট্র, সরকার এবং সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে ব্রাজিলের রিও-তে ‘শীর্ষ ধরিত্রী সম্মেলনে’ জীববৈচিত্র্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুস্থ ও টেকসই পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যেই এ ধরনের একটি দিবস পালন করা জরুরি হয়ে পড়ে। প্রথম দিকে ২৯ ডিসেম্বর বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস হিসেবে পালন করা হলেও ২০০১ সাল থেকে এটি ২২ মে পালন করা হয়। প্রতি বছর তারা নতুন নতুন থিমের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর জন্য সংকল্প গ্রহণ করেন। এই বছর তাদের থিম হল International Year of Sustainable Tourism for Development । আমাদের ভ্রমণের মধ্য দিয়ে জীববৈচিত্রের উন্নতিসাধন করাই এই বছরের বিশেষ লক্ষ্য।
আমি সবই দেখি। বুঝি মানুষের জন্য কাজ করতেই হবে। তবু আমার মনের মধ্যে এক আলাদা জীবন কাজ করেই চলেছে। এক আলাদা ইচ্ছারা জেগে উঠছে কেবল মাত্র গাছেদের জন্য। আসলে জীব বৈচিত্রের মাঝে প্রকৃতি ও পুরুষের যে মিলন, তা মুক্তি দেয় আমায়। মুক্তো করে আমার জীবন্ত সোপানকে। স্নিগ্ধ করে রুচিশীল সমাজে নতুন করে রক্তকরবী ছড়িয়ে দিতে। আমি কাব্য করতে চাই না, যে পাগলির রাজ্যত্বে আমরা বাস করছি, সেখানে দাঁড়িয়ে নিজেকে বিশু পাগলা ভাবা ছাড়া উপায় নেই। জীববৈচিত্র যেখানে সাদানীল রঙের ফলকে রাস্তা ও ফ্লাইওভার সেখানে বৈচিত্র কতটা আর যাপন কতটা সেই বিভেদ কোন জেএসটি রোবোটও করতে পারবে না। বৈচিত্রের মধ্যে অসংখ্য মাথামানবের দল এসেছে। সে সব অন্য দিন আলোচনা করব। আজ একটু গাছকথা বলি। উদযাপিত হোক সবুজ। জীবনের দরকারে যে পরিযায়ী পাখিরা আসছে না, আজ তাদেরও বলি, এসো। এই আকাশের সীমানা বদলে যাওয়া নিয়ন শহর তোমাদেরই ডাকছে।
গাছ কতটা-সেটা নতুন করে শিখিয়ে দিতে এ ভারতবর্ষে আমি আসিনি। আমার সেই প্রজ্ঞা, জ্ঞান, মেধা নেই। তবে গাছের কথা বলার আগে নিজের জীবনের কথা বলি। গাছ তো প্রাণ। গাছ তো জীবনের আনন্দ। অনুভব করি। তবে আজকাল বুঝি না। কেন বুঝি না…সেটাই বলছি। কারণ এখন আমি বৃক্ষ রোপণ করলে মরে যায়। কেন যায় জানি না। ঐ অপদার্থ, অপয়া বলে হতে পারে। গাছকথারা বুঝেছে এই অপদার্থের আয়ু শেষ। তাই এর হাতে তারা আয়ুলাভ করবে না। মানে এই দাঁড়ালো গাছ আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আমার জীবনে এখন চৈত্রের মতো অবসান। নতুন করে বেল পাতা বা দেবদাড়ু পাতা বা আম পাতার মতো নবীন বর্ণাঢ্য হয়ে উঠতে পারবে না। তবু এই গরমের অসহ্য যন্ত্রণায় গাছের কথাই বলতে ইচ্ছে করে। ঐ গাছ বাঁচানোর যশোর রোডের জন্য এই ভাবনারা নয়। এ ভাবনা আমার মনের অনন্ত গভীরে থাকা রোদ্দুর সময়ের জন্য…
হ্যাঁ, সেই ব্যবসার কথারা আসছে। এই প্রকৃতিকে চুরি করছি। লেখাকে চুরি করছি। ভাবনাকে চুরি করছি। আর পোস্ট করছি। নতুন করে কিছু সৃষ্টি করার মতো অবাক কথন আমাদের মধ্যে সত্যই কী রয়েছে… মানুষের কাছে নিজের নামটুকু পৌঁছে দিতে চাইছি। মশাই বিখ্যাত হতে চাই। কম দিনের অভিজ্ঞতায় প্রকাশনায় বই প্রকাশ করে বিখ্যাত হতে চাই। লেখার গুণমান নয়, লাইক সেখানে অক্সিজেন। নিজেদের নানা কাজের মধ্যে এই অক্সিজেন নিয়ে বুকের সাইজ বাড়িয়ে তোলাই কাজ। আর গাছ এখন টি-টোয়েন্টির মতো বিকোচ্ছে। গাছ যা অনন্ত শান্তির ছায়া দেয় সেই গাছকে কেটে মুনাফা লুটছি শহর ও শহরতলি। গ্রামের পাশে সড়কের পুরাতন বৃক্ষরা কাঁদছে। একে তো দূষণের চাপ, তার উপর ফ্লাইওভার ও হাইওয়ে এক্সটেনশন। ঐ যেমন ভারতীয় জীবনে আচ্ছে দিনের নামে জিএসটির বাঁশ আবার অন্য দিকে স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ কমিয়ে বড় মাছের বণিককে সুবিধা করে দেওয়া। অনাদায়ী ঋণের সেই সব জিও নেতারা দাঁত কেলিয়ে ফিল গুড ধন ধনা ধন। মুখের গালিগুলো লিখলাম না। যাক ফিরে আসি গাছের সামিয়ানায়। গাছ কী ও কেন এ নিয়ে বিস্তর কথা হয়ে গেছে, গাছ না থাকলে আমাদের ভবিষ্যতের মিউজিয়ামে সেই বীজ দেখতে যেতে হবে মুখে কৃত্রিম অক্সিজেন লাগিয়ে। নাসার বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর কথা না ভেবে বৃহস্পতির চাঁদের কথা ভাবে। এখানেই তো পার্থক্যের বাজারে বিপণন বাড়ছে। না খোয়াই নদীর ধারে এখন যদি যান দেখবেন বড় বড় রেস্তোরা। বন নষ্ট করে, সৌন্দর্য বিসর্জন দিয়ে বাঙালির ট্রাভেল ডেস্টিনেশন। গাছের নিকুচি করেছে, শালা পার্টি ফান্ডের টাকার জন্য ডুয়ার্সের গাছও নষ্ট করতে পারি। এই তো বাংলার হাল। শুধু ফান্ডিং চাই। সেটা বালি খাদান থেকে শুরু করে গাছ কাটা। সেই জন্য লুকিয়ে চলতে থাকে এই কু-চক্র। অরণ্যের রোদনের মতো ঘরের খেয়ে আমরা পিটিশন সই করি। লাভ নেই। পরিবর্তনের হুশ আর মানুষের মনে আসবে না। মানুষ এখন টাকা বোঝে। মদ বোঝে। ফুর্তি বোঝে। ডিজে বোঝে। শালা কবিতা বোঝে না। কবিতা লিখলে বাঁকা চোখে ঘরের লোক দেখে, হাসে। আর পার্টি পলিট্রিক্স তো সে সবের ফায়দা লুটবেই। প্রায়ই দেখি ফেবু কবি বলে গাল দেয়, যারা দেয় তারা নিজেরাই ভাল মানের লিখতে পারে না। শুধু কেতা করে লবিকে ঠিক রেখে লেখকের সিটে থেকে সাংবাদিক। বড় বড় মিডিয়া হাউজ এভাবেই ভুষোদের নিয়ে তৈরি। তাই গাছের এই কান্না দিনে এগিয়ে আসে না কেউই। ঐ বুড়ো সুমন এখন পেনশন পান। তাই মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে সহজ সরল ভাষায় খোলা চিঠি দিয়ে চুপ। এটা ১৯৯২ সাল হলে গাছকে চাই, শুধু গাছকে চাই বলে একটা কালজয়ী গান পেতাম। পেলাম না। আমরা অনেক কিছুই পাব না। এটা বুঝেছি, যেদিন দেখেছি বড় বড় ষাট সত্তর বছরের গাছের গোড়াতে হিং দিয়ে সেগুলো মেরে ফেলা হচ্ছে। চুপ করে আমি আমি করে নিজেরটুকু গুছিয়ে নিয়েছি।
আমি যেখানে এখন ফ্ল্যাটে থাকি এই স্থানটি এক সময় ডোবা ছিল। আমি দলিলে দেখেছি পাশে ছিল গাছ। আর অদূরে ছিল ধানমাঠ। সবই পুরোনো বাসিন্দারা আমার জিঘাংসার উত্তরে বলেছেন। সেই ধান জমি নেই। রয়েছে বড় বড় ফ্ল্যাট বাড়ি। রয়েছে কেবিল ও ইলেকট্রিকের খুঁটি। গাছ একদম কম। গাছগুলো নেই। গাছগুলোকে আমাদের মডিউলার কিচেন খেয়েছে। গাছগুলো আমাদের দরজার জানলা। গাছগুলো আমাদের দামী আসবাব। যদিও বার্মাটিক সেগুন কাঠ এখন নেই, তবু চোরাই পথে শিলিগুড়ি থেকে সেগুন কাঠ আসে। উত্তরবঙ্গের গাছের আমাদের আমোদ মেটায়। স্ট্যাটাস বাড়ায়। আর আমরা বলে উঠে গাছ লাগাও, প্রাণ বাঁচাও। নিজেদের পরবর্তি প্রজন্ম এই সব বলতে চায়। কেন চায়, কিভাবে চায় সেটা বুঝতে পারি না। ওরাও একটু বড় হলে মানুষের বুদ্ধিজীবী মানসিকতা বুঝে নেবে। শিখে নেবে কী করে ফিফটিন জি ফর্ম জমা দিতে হয় এপ্রিল মাসের শুরুতেই…
গাছ আমরা তো নষ্ট করেছি। বলতে পারেন প্রকৃতিকে আরও ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছে দিয়েছি। কীভাবে…আমাদের এলাকায় জলের চাহিদা মেটাতে ডিপ টিউবওয়েল থেকে রোজ দুই বেলা জল তোলা হয়। অথচ কোনও বাড়িতে রেন ওয়াটার পাইপ নেই। মানে আমরা শোষণ করে ফূর্তি করছি, হ্যাঁ আমি নিজেই করছি অথচ প্রকৃতিকে দিচ্ছি না কিছুই। আমি একটু নরম মনে বাড়ির নিচে গাছ লাগিয়ে ছিলাম। বাকি ফ্ল্যাটের লোকজন বলল পোকা হবে, সাপ আসবে বলে কেটে দিল গাছ। এই সমাজে আমি আর মেরুদন্ড সোজা করে কোথায় বাঁচলাম। আমি কতটা বাজে সেটা নিজেই জানি না তেমন। এসব লিখতে বসে আমার মৃত বাবার কথা মনে এলো। তখন অনেক ছোট। এই দশ বছর বয়স। আমাদের বাড়ির বাইরে কমন এরিয়ার সাইডে বাবা এক বর্ষার দিনে অনেক গাছ লাগাল। আমিও মনের আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজলাম। তারপর গাছগুলো বড় হল। ছিল রঙ্গন ফুল, কৃষ্ণচূড়া, টগর, বোগেনবিলিয়া, গন্ধরাজ ইত্যাদি। কিছু বছর গেল। গাছের পাতা ময়লা করত বলে জমাদারকে আলাদা করে পয়সা দিয়ে তা পরিস্কার করানো হত, কিন্তু কৃষ্ণচূড়া ছায়া দিতে দিতে বিশাল আকৃতি হয়ে পাশের একটি বাড়ির রিজার্ভার ফাঁটিয়ে দিল। ব্যাস সেই বাড়ি তো ক্ষেপে লাল…বেগুনী…তাই সবুজ গাছটি কেটে ফেলা হল। এই বাড়ির ঐতিহাসিক এক ব্যক্তিত্ব থাকতেন, যদিও তিনি মারা যাওয়ার পর এই ঘটনা। গাছটি মারা গেল। গাছটি আর নেই। এখন ওখানে রাবিশ ফেলা হয়। পাশে সজনে গাছ রয়েছে। তবে তাও যে কবে কাটা হবে জানি না।
গাছ আজকাল প্রেমের মতো হয়ে গেছে। কখন যে গাছ লাগান হবে আর কাটা হবে স্বয়ং তেত্রিশ কোটি দেবদেবী জানেন না। তেমনি প্রেমও কবে শুরু আর কবে শেষ হবে কেউ জানে না। আসলে গাছ লাগানো এখন ক্রেডিটের বিষয়। অনেক স্থানেই দেখি লেখা এই গাছ মেনটেন করছেন….এই সংস্থা। যখন গড়িয়াহাটে ফুটপাতের দোকান তুলে দেওয়া হল তখন প্রায় পাঁচ মিটার অন্তর গাছ লাগানো হয়েছিল। আজ সেই সব গাছের অস্থিত্ব নেই। আসলে এখন যে বৃক্ষরোপণ শহরে হয় বেশিরভাগ লোক দেখানো। রাস্তার ডিভাইডারের মাঝে লাগানো গাছ অনলি ফর শো। সেগুলো বৃক্ষ হয়ে ছায়া দেওয়ার জন্য নয়। মাস গেলে বনদপ্তরের লোক সেগুলো বনসাইয়ের মতো করে ছেটে দেয়। ভালো সুন্দর হোক শহর। শহরের জলাশয় বাঁধাই হয়েছে। যত পার্ক ছিল বাঁধাই হয়েছে। হয়ে লাভ হয়েছে পার্টি বা ক্লাবের। পুজো হচ্ছে। সব রকমের অনুষ্ঠান হচ্ছে। শহুরে মাঠ সব দখল হয়ে যাচ্ছে।
আমরা কিছু বছর আগেও দেখেছি রাজডাঙ্গার বিশাল মাঠ। ঐ এক সময়ের ধানমাঠ। সেখানে এখন অ্যাক্রোপলিশ মল আর গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম। অদূরে আরও কিছু স্কুল ও অফিস হয়েছে। সবই গাছের সবুজে ছিল। তাই রাস্তা তৈরির জন্য যশোর রোডের এই হাল দেখে কান্না পায় না। ঐ যেমন একটা প্রেম টাইমপাসের মতো চলে গেলে দুতিন দিন ঘুম হয় না। ঠিক তেমনই এই গাছ কেটে সাফ করার পর হবে। তারপর আমরা আবার এই ধর্ষিত প্রকৃতির সাথেই সহবাস করব। কেউ পাঁচটা কবিতা লিখব, গালি দেব তাতে প্রকৃতির ভাঙন তো কমবে না। পলি বাড়তে থাকবে তিস্তা থেকে গঙ্গায়। কারণ আমরা তো আমাদের দরকারে বাঁধ দিয়েছি। বিদ্যুতের সাথে আল্ট্রা মর্ডান সব ফিরিস্তির ফাইফ স্টার এসি চাই। এটাই জীবনের মজা। এটাই জীবনের চেতনা। এটাই জীবনের ট্রাজেডি।
আসলে ক্যাটাসট্রফিটা কখন শুরু হয়েছিল জানেন…যবে উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার থেকে ইংরেজের চাতুরিতে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। শুধু বাংলাদেশ বা কাশ্মীর বিষয়টা তারা তৈরি করেনি, তার সাথে মানুষের মনে এই চলছে চলুক, হচ্ছে হোক…বাবু কালচারের বিষাক্ত রক্তবীজ দিয়ে গেছিল। ঐ ল্যাদ খাওয়া বাঙালির রক্ত এখন আমাদের মধ্যে রয়েছে। তাই বন উঠে আসছে শহরে কিন্তু শহর আর বন্য হতে পারছে না। বিপণন। বিজ্ঞাপন। অগ্রগতির স্বপ্নে ভাওতা। মানুষের হাজার হাজার বিঘে জমিতে রাজারহাট থেকে জোকায় কম দামে ফ্ল্যাট কিনুন। সেই মহারাজাও শুধু নিজের পকেটের মুনাফায় এগুলো বলছে ফ্রেমে। মুশকিল ওখানেই। আমরা আজও এসবেই মেতে থাকি। আমরা আরও চাই। আরও অনেক চাই। চাহিদার শেষ নেই। প্রকৃতি তো কিছু চায় না। প্রকৃতিকে আমরা তার মতো করে থাকতে দিই না। এটাই তো ট্রাজেডির শ্রুতিনাটক। আমি সেন্ট লরেন্সে ছোট বেলায় পড়েছি। ফাদারের কথায় সেখানে তখন একশো সাইত্রিশ রকমের গাছ ছিল। এখনও হয়তো আছে। আমি তো গাছের ছবি ব্রাদারের কথায় তখনই আঁকতে শুরু করেছিলাম। বাঙালিয়ানার এই ভুঁড়ি ও ভাত ঘুমে আমি গাছের মধ্যে ফুল ফোঁটা ভুলতে পারিনি। ভুলতে পারিনি আনন্দের ভোরে নতুন ফুল বা ফল দেখা। আসলে আমরা তো এখন সন্তানদের যান্ত্রিক হতে শিখিয়ে দিই তাই হয়তো প্রকৃতি নষ্ট হলেও তেমন কিছু যায় আসে না। আমার মাথায় আমার কম্ফোর্ট জোন চাই। তাই কতটা বড় বিপদ গাছ ছাড়া আমাদের সামনে বুঝতেই পারি না।
আমি হয়তো থাকব না, একদিন দেখব যত বনজ সম্পদ সব এই পার্টি ফান্ডে চলে যাবে। দেখব কাঠের কলের মালিক হবে দেশের প্রধানমন্ত্রী। সেই দিন দূরে নেই। আলোকবর্ষ পেরোনোর আগেই হয়তো দেখব আমাজন জঙ্গল, সেরেঙ্গেটিতে একশো তলা বাড়ি। ঐ যে বললাম চাহিদা। মানুষের আরও চাই। অনেক চাই। চাহিদা কমাতে না পারলে, প্রলভন থেকে মুক্ত হতে না পারলে মানুষ নামক জীব….পশু সমান মানুষেরা সব পারে। তবু এই নেট যুগে পাঁচ শতাংশ মানুষ যে আজ প্রকৃতির বিরুদ্ধে এই সাম্প্রদায়িকতার নিয়ে একত্রিত হয়েছেন এতে আমি খুশি। আমি চাই ধর্ম টু প্রকৃতির বিরুদ্ধে যে আক্রমণ তা বন্ধ হোক। মানবধর্মে মানুষের শান্তির কথা বলে, বলে না যে আইএসআই জঙ্গী তৈরি করে আবার তাদের উপর বিপুল দামী ও ভারী বোম ফেলতে। আরে এতো চাহিদাই বা কেন, তাদের ধ্বংসই বা কেন। গাছ কাটলে, গাছ আবার লাগাতে হবে। এটাই কথা। গাছ কেটে দিলেও যে গাছ তারপর লাগানো হয় তাতে ছায়া হয় না। তাতে কেবল রূপক মায়া হয়। কেবল দেখানোর দিন বস। তাই প্রকৃতি জলাঞ্জলি দিয়ে সৌন্দর্যায়ন হচ্ছে শহরের মতো দেশের হাইওয়েতে। এখন তাই ভাবি এই যে মেট্রো লাইন হচ্ছে সারা শহরে…মাটির উপর দিয়ে এতে কতটা শব্দদূষণ বাড়বে। যা হচ্ছে তাতে কতটা উন্নতি হবে। ঐ যেমন ভয়ে থাকি কেউ প্রেম নিবেদন করলে। এবার থেকে ভাবছি প্রেমকে যেমন না বলা শুরু করব, তেমনি শহরকেও না বলব। ভাবছি বিক্রি করে দেব ফ্ল্যাট। কোনও এক জঙ্গলে বা গুহায় চলে যাব…তুমি যাবে আমার সঙ্গে এই প্রখর রৌদ্রের বৈশাখী…আরে প্রকৃতির হাওয়া আর গাছ থাকলে সেখানে কষ্ট হবে না। গাছকথারা তো ঈশ্বরী বা নদীমাতৃক মনকেমনিয়া হতে পারে না, গাছকথারা নীরব থাকে। যদিও সেই তরঙ্গদৈর্ঘ্য মেনেই এখনকার ফোরজি, ফাইভ জি চলছে…চলছে আমাদের মনের কথন নেট দুনিয়ায় প্রকাশ তবু গাছকথারা নীরব। একদিন সকালে উঠে দেখবে তোমাদের সকলে ফোন, মোবাইল, ল্যাপি, কম্পু…গাছ হয়ে গেছে…আমার ঠোঁট আমার শরীর তো আজ থেকেই শিকড় হতে শুরু করল, ভালবাসার সবুজ চোখ…প্রকৃতি আমাকে ভালবেসে গাছ করে দিচ্ছে, আমি গাছকথা শুনতে চাই…চিরশান্তিতে বিরাজ করতে চাই প্রকৃতির কবরে…আমায় তোমরা উনুনের অপদার্থ জ্বালানি ভেবো না…আমায় গাছ ভাবো…আমি রোদ্দুরের রবি-নজরুল মাসে মিশে যেতে চাই গাছকথায়…
সোমাদ্রি সাহা:22/05/2017