বিজেপি ছেড়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে ফিরলেন মুকুল রায়। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তৃণমূলনেত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পুত্র শুভ্রাংশু রায়-সহ পুনরায় তৃণমূলে যোগ দিলেন মুকুল।
এ দিন দুপুরে তৃণমূল ভবনে পৌঁছান বিজেপি নেতা মুকুল রায়। সেখানে ছিলেন মমতা, অভিষেক, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্ব। মুকুলকে উত্তরীয় পরিয়ে দলে স্বাগত জানান অভিষেক। দু’জনের আলিঙ্গনের ছবিও ধরা পড়ে ক্যামেরায়।
২০১৭ সালে মুকুল যখন বিজেপিতে যোগ দিলেন, তখনও রাজ্য বিজেপি বহরে এত বড় হয়নি। মূলত মুকুলের হাত ধরেই শ্রীবৃদ্ধি শুরু হয় গেরুয়া শিবিরের। একের পর এক নেতা আসেন দলে। বাড়ে সাংগঠনিক শক্তি। উনিশের লোকসভায় বিজেপি ১৮ আসন পাওয়ার নেপথ্যের কারিগরও ছিলেন মুকুলই। অথচ, তারপরও রাজ্য বিজেপিতে কোনও পদ দেওয়া হয়নি মুকুলকে। শুরুতে মুকুলকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করার একটা জল্পনা ছিল। সেটাও কোনওদিন বাস্তবায়িত হয়নি। উনিশের সাফল্যের পরও না। এমনকী ৩ বছর ৯ মাসে মুকুলকে রাজ্যসভার সাংসদ পর্যন্ত করেনি গেরুয়া শিবির। বরং প্রতিপদে তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, দিলীপ ঘোষই বঙ্গ বিজেপির মুখ। মুকুল ঘনিষ্ঠদের মতে, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপিতে অস্বস্তি বোধ করছিলেন। এমনকী গতবছর একবার দল ছাড়ার ব্যাপারে মনস্থিরও করেছিলেন। কিন্তু পরে আবার মত বদলান। অবশেষে ‘শান্তির খোঁজে’ ঘরে ফিরলেন বিজেপির সদ্যপ্রাক্তন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি।
বিজেপিতে মুকুল যে অস্বস্তিতে ছিলেন, সেটা মমতাকেও বলতে শোনা গেল। দলে প্রাক্তন সহকর্মীকে স্বাগত জানিয়ে তৃণমূলনেত্রী বললেন, “মুকুল এখানে আসাতে মানসিকভাবেও খানিকটা শান্তি পেল। বিজেপিতে ওঁর শরীরটাও খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। আসলে বিজেপিটা করা যায় না। ওখানে এত শোষণ, এত নিষ্পেষণ। ওকেও অনেক চমকে ধমকে নিয়ে গিয়েছিল। ওঁর উপরও কম অত্যাচার হয়নি।”
ঘরের ছেলে বিরোধী শিবিরে যোগ দিলেও মুকুল রায়কে নিয়ে প্রকাশ্যে কখনওই ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা যায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বরং তাঁর গলায় শোনা গিয়েছে, ‘মুকুল অতটা খারাপ না।’ উলটোদিকেও সৌজন্য বজায় রাখতে দেখা গিয়েছিল মুকুল রায়কেও। গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েও কখনও সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেননি তিনি। তাই মুকুলকে স্বাদরেই স্বাগত জানাল তৃণমূল। কিন্তু সেই মঞ্চেই দলনেত্রী বার্তা দিয়ে রাখলেন, মুকুল রায় ফিরলেও গদ্দারদের দলে ফেরানো হবে না।